মোঃ আবুল কাশেম,বিশ্বনাথ প্রতিনিধি : সিলেটের বিশ্বনাথে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ডাকাতদল। কোনভাবে পুলিশ-জনতা প্রতিরোধ করতে পারছেনা। ইদানিং হঠাৎ করে চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাকাত আতংকে রয়েছে উপজেলার মানুষ। শুক্রবার রাতে বিশ্বনাথ-দক্ষিণ সুরমা সীমান্তবর্তী সিলেট-ঢাকা মহা-সড়কের পাশের সিলেট-ঢাকা মহা-সড়কের তুরু মিয়া, বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের ধর্মদা গ্রামের মো. সফিক আহমদের বাড়ি, উপজেলা শহরের জানাইয়া-মুফতিরগাঁও সড়কের পাশে মস্তাব আলীর বাসায় ডাকাত দল হানা দিয়েছে।

একটি সুত্র জানায়, দক্ষিণ সুরমা থানার রশীদপুরে একটি বাড়িতে ডাকাত দল হানা দিলে দক্ষিণ সরমা উপজেলার রশীদপুর, বিশ্বনাথ উপজেলার ধর্মদা, হিমিদপুর, তাতিকোনা, মোহাম্মদপুর, ইলিমপুর, পূর্ব শ্বাসরাম গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামের শত শত লোকজন ও বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমা ও ওসমানীনগর থানা পুলিশ ডাকাতদের ধাওয়া করলে পালিয়ে যায় ডাকাত দল। তবে একই রাতে বিশ্বনাথের জনমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরি সংগঠিত হয়েছে। চুরেরদল বিদ্যালয়ের অফিস রুমের আসবাবপত্রসহ ৭টি সিলিং ফ্যান নিয়ে গেছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিশ্বনাথে চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংকে রয়েছেন গোটা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। ডাকাতির শিকার হয়ে লাখ লাখ টাকা হারাতে হচ্ছে অনেক প্রবাসী পরিবার ও ব্যবসায়ী’সহ গ্রামের জনসাধারণকে। বেশির ভাগই ডাকাতদলের নজরে পড়ছে প্রবাসী-ব্যবসায়ীদের বাড়ি। তবে পুলিশ প্রতিদিন ডাকাত গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রাখলেও দুই-একজন ডাকাতকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলে অধরা রয়ে যাচ্ছে অনেক ডাকাত। ডাকাতির অনেক ঘটনা রহস্যজনক বলে পুলিশ জানায়।

ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সূত্রে জানাগেছে, ডাকাতরা অত্যাধুনিক যন্ত্র দিয়ে ঘরের সামনের গেটের তালা ও দরজা লকার ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রেমুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে লুটপাট চালায়। অনেক বাড়িতে ডাকাতির সময় ডাকাতরা দেশীয় অস্ত্র’সহ অগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে থাকতে দেখছেন বলে গৃহককর্তারা জানান। ডাকাতদের হামলায় অনেকেই আবার আহতও হচ্ছেন। রাতে অনেক বাড়িতে ডাকাতির খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন এগিয়ে আসলে ডাকাতরা অগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ফাঁকা গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথাও শোনা গেছে। উদ্ধার করা হচ্ছেনা ডাকাতদের ব্যবহৃত হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রও। গত কয়েক মাসে উপজেলা বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে ।

অনুসন্ধানে জানাযায়, সদর ইউনিয়নের হিমিদপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী জিতু মিয়া, জানাইয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আকবর হোসেন কিসমত, দেওকলস ইউনিয়নের আলাপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী আবদুল মতিন, রামপাশা ইউনিয়নের চকরামপ্রসাদ লামারচক গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী জামাল হোসেন, খাজাঞ্চী ইউনিয়নের নোয়ারাই গ্রামের লন্ডন প্রবাসী ছমক আলী, বাওয়ানপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুল হাই বাবুল, গুমরাগুল গ্রামের সৌদি প্রবাসী আলাউদ্দিন ও সর্বশেষ গত বুধবার উপজেলার হিমিদপুর গ্রামের বাবুল খানের বাড়িতে ডাকাতি সংগঠিত হয়েছে।

এব্যাপারে সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম সাহিদ বলেন, ডাকাত আতংকে এলাকায় প্রতি রাতে আমরা কয়েকজন পাহারা দেই।ধর্মদা গ্রামের সফিক আহমদ বলেন, রশীদপুরে ধাওয়া খেয়ে আমাদের গ্রামের দিকে আসে। এসময় আমরা কয়েক জন প্রতিরোধ করতে চাইলে আমার বাড়ির সামন দিক দিয়ে চলে যায়। ধাওয়া না দিলে ডাকাত দল বাড়িতে প্রবেশ করত।

ইউপি সদস্য মো. ইজার আলী সাংবাদিকদের বলেন, চুরি-ডাকাতি যেহারে বাড়ছে বাঁচার উপায় নেই। মানবাধিকার কমিশন বিশ্বনাথ উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক ইউ/পি চেয়ারম্যান মো. ছয়ফুল হক বলেন, পুলিশি তৎপরতা না থাকায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা সদরের মানুষ যেখানে নিরাপদ নয়, সেখানে গ্রামাঞ্চলের মানুষ কিভাবে নিরাপদ থাকবে।

আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে ডাকাতি বৃদ্ধি পেয়েছে।উপজেলা সদরের পুরানবাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মনির হোসেন বলেন, বিগত দিনের চেয়ে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে।

উপজেলা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির কারণে চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলাকাবাসী আতংকে রয়েছেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি পরিষদের আইনশৃঙ্খলা সভায় গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হবে।

বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ মো. রফিকুল হোসেন সাংবাদিক কে বলেন, শুক্রবার রাতে উপজেলার কোথাও ডাকাত হানা দেয়নি। বিষটি সটিক নয়। তিনি বলেন, দক্ষিণ সুরমার রশীদপুরে একটি বাড়ির সামনে ডাকাত হানা দিলে এক পর্যায়ে চারিদিকে মাইকিং হলে লোকজন বেরিয়ে আসে। সেখানে স্থানীয় জনতা এবং তিন থানা পলিশ ধাওয়া করলে ডাকাত দল পালিয়ে যায়।