স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। শেষ মুহূর্তে হবিগঞ্জ-৩ আসনের সর্বত্র দেখা দিয়েছে নৌকার উন্মাদনা।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিটিং এবং মিছিলে মুখরিত ছিল এমপি আবু জাহিরের প্রচার প্রচারণায়। তিনি নিজে একের পর এক সভায় বক্তৃতা করেন। হাটে-বাজারে গণসংযোগ করেন। নারীরা দোয়ারে-দোয়ারে ভোট প্রার্থনা করেন। খেলোয়াড় ও সংগঠকরা চলে যান ভোটারদের কাছে। সংস্কৃতি কর্মীরা মুখরিত করে রাখেন মঞ্চ। ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে নৌকার প্রচারে ছিল ব্যস্ত। সবচেয়ে বড় চমক ছিল উমেদনগরবাসীর বিশাল নৌকার মিছিল। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সকল নির্বাচনী এজেন্টদের।

নির্বাচনী প্রচারণা, গণসংযোগ এবং বিভিন্ন সভায় এমপি আবু জাহির বলেন, হবিগঞ্জ-৩ আসনকে উন্নয়নের অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিতে চাই। চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, বিনোদন, সংস্কৃতি, ক্রীড়াসহ সকল ক্ষেত্রেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চাই। নারীর ক্ষমতায়নে আমার থাকবে বিশেষ পরিকল্পনা। অতীতের ন্যায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং কবরস্থান, শ্মশানসহ সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়নমূলক প্রকল্প অতীতের চেয়ে আরো বেশি গ্রহণ করা হবে। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌছে গেছে। এখন সেখানে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। গ্রামে বসে ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনার চেষ্টা করব। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক আয় বর্ধনমূলক কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার প্রদান করব। অব্যাহত থাকবে খাল খননসহ গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। আমার বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শী নেতৃত্বের জন্যই উন্নয়নের এই স্বপ্ন দেখছি আমি।

তিনি বলেন, আমি কাজ পাগল মানুষ। কাজের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। জনগণের ভালবাসায় আমি এই পর্যায়ে এসেছি। ভালবাসার ঋণ পরিশোধ করতে শরীরের শেষবিন্দু রক্ত দিয়ে কাজ করে যাব। আমার শরীরে গ্রেনেডের অসংখ্য ছিটাগুলি। পরিবারের প্রতি সময় দিতে পারি না। কিন্তু জনগণের পাশে থাকতে এতটুকু অবহেলা করিনি। জনগণের মাঝে থেকেই শান্তি পাই। আমার নির্বাচনে জনগণ নিজেদের প্রচেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছেন। প্রবাস থেকে নেতাকর্মীরা দেশে এসেছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়ে মাঠে নেমে গেছেন। এই ঋণ আমি কোনওদিন শোধ করতে পারবো না। তবে সকলের জন্য যদি কাজ করি, তাহলে মনে করবো এতটুকু হলেও প্রতিদান দিতে পেরেছি।

তিনি আরো বলেন, ষড়যন্ত্র এবং মিথ্যাচার দিয়ে জনগণের সাথে আমার ভালবাসার বন্ধন ছিন্ন করা যাবে না। আমার জনগণ জেলা সদরের মানুষ। তারা অত্যন্ত সচেতন। সত্য-মিথ্যা বিচারের ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তারা এটাও বুঝেন- কে তাদের পাশে ছিল এবং কে পাশে থাকবে। আমি এমপি হওয়ার আগে থেকেই জনগণের পাশে ছিলাম। তাই বার বার জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে। আমি হঠাৎ এসে নির্বাচনে অংশ নেইনি। প্রচারণা শুরুর আগে হবিগঞ্জ-লাখাই এবং শায়েস্তাগঞ্জবাসীর অনুমতি নিয়েছি। আপনারা হাত তুলে সমর্থন জানিয়েছেন বলেই আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে নৌকা নিয়ে এসেছি। আমি যাতে নৌকা পাই, তার জন্য আপনারা দোয়া করেছেন। আপনাদের সমর্থনকে সামনে রেখেই জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে তৃতীয়বারের মতো নৌকার দায়িত্ব দিয়েছেন। এখন আমাকে নির্বাচিত করার দায়িত্বও আপনাদেরই।

পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ :

বুধবার সকাল ১০টায় হবিগঞ্জ হাইস্কুল এন্ড কলেজ মাঠে হবিগঞ্জ-৩ আসনের সর্বস্তরের নৌকার এজেন্টদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসতে অতীতের ন্যায় এবারো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সৃষ্টি করতে পারে। গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইবে। এই ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ব্যাপারে সতর্ক থেকে নৌকার বিজয় নিশ্চিতে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করেন। আওয়ামী লীগের জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় পরিষদে সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এমপি আবু জাহির।

এ সময় নির্বাচনের আচরণবিধি, পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. আলমগীর খান। এতে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব এডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদার, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক, হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল, লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ। এতে পুরুষ ও নারী এজেন্ট, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উমেদনগরবাসীর বিশাল মিছিল :

সন্ধ্যায় এমপি আবু জাহিরের সমর্থনে হবিগঞ্জ শহরে বিশাল মিছিল বের করেন উমেদনগর এলাকার জনগণ। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণকালে নৌকার শ্লোগানে মুখড়িত হয় শহর। এতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও সভা

গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এমপি আবু জাহির হবিগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন এবং নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখেন। সকালে তিনি শায়েস্তানগর এলাকায় যান। সেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং লোকজনের সাথে কথা বলেন এবং উন্নয়নের স্বার্থে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন। পরে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে পার্কিংয়ে নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা প্রদানসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন তিনি। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। পরে এমপি আবু জাহির হবিগঞ্জ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ এবং নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা করেন।