মোযযাম্মিল হক মাছুমী, ফান্দাউক দরবার শরীফ থেকে :

ত্বালাআল বাদরু আলাইনা
মিন ছানী ইয়াতিল ও’ইদায়ী
ওয়াজাবাত শুকরু আলাইনা
মাদা’আ লিল্লাহী দায়ী

পৃথীবির সকল অন্ধকারকে দূরীভূত করে আলোকিত করেছিলেন যিনি, তিনি হলেন সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব নূর নবী হাযরাত মোহাম্মাদ সাঃ। যিনি মা আমেনার পবিত্র রেহেমে নূরের ফোয়ারা নিয়ে বিশ্বময় আলো ছরিয়ে দিয়েছিলেন। সৃষ্টিকুল পেয়েছিল তাদের পূর্ণতা ও স্বার্থকতা। যাকে সৃষ্টি না করলে মহান আল্লাহ কোন কিছু সৃষ্টি করতেন না। তিনি সকল নবীদেরও নবী। যিনি ১২ রবিউল আউয়ালের এই মোবারক দিনে পৃথিবীতে আগমন করেন।

যেই দিনটি মুসলিম উম্মার সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দের দিন। সমগ্র মুসলিম জাতি এই দিনকে শ্রদ্ধাভরে পালন করে। আর এই দিনটিকে পালন করতে প্রতি বছরেই বিশাল কর্মসূচী ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হয়। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় এক বিশাল মোবারক আনন্দ মিছিল বের করা হয়। পীর সাহেবের আহ্বানে এতে হাজার হাজার মুসুল্লীদের সমাগম হয়। ফান্দাউকের পার্শ্ববর্তী মোড়াকরি, আতুকোড়া, বুড়িশ্বর, শ্রীঘরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে মিছিলের সাথে মানুষ ফান্দাউক মাদরাসা ময়দানে জরো হয়। পরে সকলে সমবেত হয়ে পীর সাহেবের নেতৃত্ত্বে মোবারক আনন্দ মিছিলটি ফান্দাউক, মোড়াকরির বেশ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

এসময় সবার মূখে মূখে বলতে শুনা যায়- “নূর নবীজীর জন্মদিন, আজকে মোদের খুশির দিন” “মিলাদুন্নবীর আলো ঘরে ঘরে জালো”। মিছিল পরবর্তী এক আলোচনা সভা মাদরাসা ময়দানে অনুষ্টিত হয়। ক্বোরআন তিলাওয়াত, নাত শরীফ পাঠ সহ বিশ্ব নবীর আগমনের ওপর ক্বোরআন হাদিসের ভিত্তিতে মূল্যবান বক্তব্য দেওয়া হয়। পীর সাহেব তার বক্তৃতায় বলেন- আজকের এই দিন গোটা সৃষ্টিকুলের খুশির দিন। যদি নূর নবী সাঃ এই পৃথিবীতে না আসতেন তবে কোন নবীর আসার প্রয়োজন ছিল না কারন আমার নবীর আগমনী বার্তা পূর্ববর্তী সকল নবীগন দিয়েছেন এবং তারা আমার নবীর উপর ঈমান এনেই নবুয়্যাত প্রাপ্ত হয়েছেন। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তার পক্ষ থেকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে সর্বোত্তম নিয়ামত হল মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ।

আর তাই আল্লাহ পাক বলেছেন আমাদেরকে এই নিয়ামতের শুকরিয়া তথা আনন্দ প্রকাশ করতে। তাই আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমরা এই ঈদে-মিলাদুন্নবী সাঃ উদযাপন করছি। কিন্তু অতিব দুঃখের বিষয় কিছু নামদারী মুসলমান নবী সাঃ ওনার মিলাদকে মানতে চায় না। তারা বলে সিরাতুন্নবী পালন করলেই চলবে। আসলে মিলাদুন্নবী ও সিরাতুন্নবী সাঃ কোন একটিকে বাদ দিলে মুসলমান দাবী করা যায় না। কেননা মিলাদ যার সিরাত তার। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানের এই চরম দূরাবস্থার কারন হল নবীজীর আদর্শ ও তার মহব্বত থেকে দুরে থাকার কারনে।

যেখানে আবু লাহাব একজন মুশরীক হয়ে নবীর মিলাদে খুশি হয়ে কবরে শান্তি পায় সেখানে আমরা উম্মত হয়ে মিলাদুন্নবী পালন করলে অবশ্যই আমরা নবীর সাথে জান্নাতবাসী হব ইনসাআল্লাহ।

এছারা অন্যান্নদের মধ্যে আরোও বক্তব্য দেন, পীরজাদা আল্লামা মুফতী মঈনুদ্দীন আহমাদ, পীরজাদা আলহাজ্ব মাওঃ সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক, মাওঃ সৈয়দ জাকারীয়া আহমাদ, ফান্দাউক মাদরাসার সুপার মাওঃ আবুবকর ভুইয়া, মাওঃ খোরশেদ আলম, মাওঃ সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন শামীম, ডাঃ মাওঃ বশির আহমাদ পাঠান, মোঃ বাইজিদ মিয়া মিলাদ মোস্তফা সাঃ পরিচালনা করেন মুফতী মাওঃ মুহা. মোযযাম্মিল হক মাছুমী সহ বহু ওলামায়ে কেরাম। রাজনৈতিক পেশাজীবী, সাংবাদিকদসহ নানা পেশার বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, লাখাই থানা আওয়ামীলীগ নেতা জনাব সালাউদ্দিন সুমন, জনাব মোঃ মাহফুজ মিয়া, জনাব মোজাহিদ মিয়া, মোড়াকরির সাবেক মেম্বার জনাব আঃ ছুবহান, ফান্দাউক ইউ পি চেয়ারম্যান হাজী ফারুকুজ্জামান, যুবলীগ সভাপতি জনাব জানে আলম সায়েম, বিএনপি নেতা জনাব ফরহাদ মেম্বার, আলমগীর মেম্বার প্রমূখ।

পরিশেষে ফান্দাউক দরবারের বর্তমান পীর সাহেব দোয়ার মাধ্যমে আলোচনা সভার সমাপ্তি হয়। এদিকে বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব থেকে সারা রাত্রিব্যাপী দরবারে এক বিরাট ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে পীর ভাই ভক্ত মুরিদানদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

সারারাত্র ব্যাপী মাহফিলে বাদ মাগরিব পীর সাহেব তরিকার তালিম ও মুল্যবান নসীহত প্রদান করেন। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে ওয়াজ করেন ফান্দাউক দরবারের বিশিষ্ট খাদেম আলহাজ্ব মুফতী মাওলানা হাফেজ নেছার উদ্দিন, মাওঃ কামাল উদ্দিন আনছারী, মাওঃ হুমায়ুন কবীর সাহেব প্রমূখ।