এটিএম সালাম,নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে ঃ
নবীগঞ্জের পল্লীতে যৌতুকের জন্য ঘাতক স্বামীর দেয়া আগুনে পুড়ে গুরুতর আহত গৃহবধু রোমানা বেগম অবশেষে গতকাল বুধবার সকালে মারা গেছেন। ৭দিন আগে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়েছিলো তার পাষন্ড স্বামী নানু মিয়া। গুরুতর আহত ও বির্মষ গৃহবধু রোমানা ৭ দিন মৃত্যূর সাথে লড়াই করে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে মৃত্যূবরণ করেছে।

এ ঘটনায় পাষন্ড স্বামী নানু মিয়াকে গত মঙ্গলবার দুপুরে শেরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের কাছে স্বামী নানু মিয়া পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি দিয়েছে। এর একদিন আগে স্বামীর বাড়িতে নির্যাতন কারী শাশুড়ীকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে রোমানা বেগমের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের মাতম বিরাজ করছে।

জানাযায়, গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোমানার মৃত্যূ হয়। পুলিশ সুত্র জানায়, ঢাকায় রোমানার পোষ্ট মর্টেম শেষে তার লাশ নবীগঞ্জে নিয়ে আসা হবে। রোমানার ভাই আব্দুর রউফ মোবাইলে জানান স্থানীয় সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর তত্বাবধানে রোমানার লাশ ময়না তদন্ত হচ্ছে। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন।

রোমানার পারিবারিক সূত্র জানায়, নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের ছিটফরিদপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের কন্যা রোমানা বেগম (২৩) স্বামীর বাড়িতে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়ে কিছুদিন পূর্বে তার বাবার বাড়ি এসে আশ্রয় নেয়। গত বুধবার গভীর রাতে তার পাষন্ড স্বামী নানু মিয়া (৩৫) ঘুমন্ত অবস্থায় তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়।

এ সময় রোমানার চিৎকারে পরিবারের লোকজন জেগে উঠে দেখেন তার সারা শরীর ঝলসে গেছে। তাৎক্ষণিক রোমানাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে মুমূর্ষ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে প্রেরণ করা হয়।

এদিকে, হবিগঞ্জ-সিলেট আসনের সংরক্ষিত মহিলা এমপি কেয়া চৌধুরী দোষীদের গ্রেফতারের জন্য সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি ও হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানান। পুলিশ আসামীদেরকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালায়।

এ ব্যাপারে রোমানার পিতা আব্দুর রহিম বাদী হয়ে রোমানার স্বামী নানুকে প্রধান আসামী করে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা আরও ২/৩ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। গত রবিবার নবীগঞ্জ থানায় মামলা রেকর্ড হয়। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে রোমানার শাশুড়ি মায়া বেগমকে গ্রামের বাড়ি সোনামপুর থেকে গ্রেফতার করে।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিকেলে নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) গৌর চন্দ্র মজুমদারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ চিরুনী অভিযান চালিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী শেরপুর পয়েন্ট থেকে অগ্নিদগ্ধ রোমানার পাষন্ড স্বামী নানু মিয়াকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত নানু মিয়া ওসমানীনগর থানার কালনীড়চর সোনামপুর গ্রামের ছালিক মিয়ার পুত্র। গ্রেফতারকৃত নানু মিয়াকে নিয়ে মঙ্গলবার হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস বিফিং করে পুলিশ।

এতে রোমানার স্বামী নানু মিয়া গৃহবধু রোমানা বেগমের উপর পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবান বন্দি দেন। এদিকে রোমানা বেগমের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এলাকাবাসী ঘাতক স্বামীর ফাসি দাবী করেছেন। নিহত রোমানা বেগমের বাবা আব্দুর রহিম বলেন, আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য প্রান দিতে হলো। আমি পাষন্ড নানু মিয়ার ফাঁসি চাই।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল বাতেন খান জানান, তারা রোমানার মৃত্যর খবর পেয়ে সাভার থানার সাথে যোগাযোগ করেছেন। স্বামী ও শাশুড়ি কে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দোষীদেরকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন, এই মর্মান্তিক বিষয়টি প্রথম থেকেই তদারকি করে আসছে। পুলিশ ইতিমধ্যে স্বামী ও শাশুড়ীকে গ্রেফতার করেছে।

যৌতুকের জন্য নিরীহ গৃহবধু রোমানার উপর এ ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া যায়। এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী স্বামীর অগ্নিদন্ধে গৃহবধূর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।