মোহাম্মদ আলী সরকার,শায়েস্তাগঞ্জ :
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নূরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম নসরতপুর গ্রামে মৃত হাজী আঃ রহমান কালা মিয়ার ফার্মে আসন্ন কুরবানীর ঈদে বিক্রির জন্য ২৯ মন ১৬ কেজি ওজনের একটি বিশাল আকৃতির ষাঁড় পালন করা হচ্ছে। পরিবারের সকলের স্নেহ মমতায় ওই ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে বড় কালো মানিক। বড় কালো মানিক নামটির পিছনে কারণ হল, ওই ফার্মে আরো একটি ছোট কালো মানিক ষাঁড় রয়েছে। যে কারণে ওই ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে বড় কালো মানিক।
ওই ষাঁড়টির দৈর্ঘ্য ৭৭ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১০০ ইঞ্চি যার ওজন ২৯ মণ প্রায়। গতকাল বৃহস্পতিবার ১৫জুন সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই ষাঁড়টির মালিক মৃত হাজী আব্দুর রহমান কালা মিয়া গত দেড় মাস পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন ওই ষাঁড়টির বয়স ৪বছর।
ফিজিয়ান জাতের ওই ষাঁড়টি তিনি নিজের খামারের গাভীর দেয়া একটি বাচ্চা থেকে লালন পালন করে আসছিলেন। এখন এটির নাম রাখা হয়েছে বড় কালো মানিক। এ ব্যাপারে আলাপ কালে খামারের মালিক মৃত হাজী আব্দুর রহমান কালা মিয়ার পুত্রবধূ পারুল বেগম জানান, তার শ্বশুর মৃত্যুর পর তিনি নিজেই খামারটির দায়িত্ব নেন। তার খামারে দিনরাত কাজ করছে ৪জন শ্রমিক।
পারুল বেগম দৈনিক শায়েস্তাগঞ্জকে আরো জানান,গত কয়েক মাস পূর্বে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় একটি পশু মেলা হয়েছিল। কিন্তু ওই মেলায় আমার বড় কালো মানিককে নেওয়া সম্ভব হয়নি। যে কারণে বড় কালো মানিকের সন্ধান প্রানি সম্পদ কর্মকর্তারা জানেননি। ওই খামারের মাধ্যমে তাদের পরিবার লাভবান বলেও জানান তিনি।
তার খামারে ৪৫টি ছোট বড় ও মাঝারি সাইজের পশু রয়েছে। এর মধ্যে দুধের গাভী ২৮ টি, ষাঁড় ২টি ও মাজারি সাইজের বাছুর ১৫টি। তবে সবার নজর কেঁড়েছে এই ফার্মের বড় কালো মানিক ষাঁড়টি। দেখতে বিশাল আকৃতির ও অত্যন্ত শান্ত প্রিয় এই বড় কালো মানিকের সন্ধানটি এর পূর্বে তেমন কেউ জানেন নি। স্থানীয়রা জানান, ওই রড় কালো মানিক শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বড় ষাঁড় হবে বলে তাদের ধারণা। প্রতিদিন ওই বিশাল আকৃতির বড় কালো মানিককে এক নজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার লোকজন মৃত আব্দুর রহমান কালা মিয়ার বাড়িতে এসে ভিড় জমাচ্ছেন।
এদের মধ্যে অনেক ক্রেতাও রয়েছেন। এ ব্যাপারে আলাপ কালে ফার্মের শ্রমিক হেলাল মিয়া জানান, প্রতিদিন সকালে তিনি বড় কালো মানিককে ২কেজি গমের ভুষি, ২কেজি মসুর ডালের ভুষি, ১ কেজি ধানের কুড়া, ৩ কেজি ফিড, ১ কেজি খৈল,১০ কেজি ধানের খড়, ও ৩০ কেজি কাঁচা ঘাস খাওয়াচ্ছেন। বিকেলে ও একই ভাবে খাবার খাওয়াচ্ছেন।
কালো মানিকের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য দিনে ৩ থেকে ৪ বার গোসল করাচ্ছেন।এভাবে প্রতিদিন তিনি ১৫০০ টাকার খাদ্য খাওয়াচ্ছেন। তিনি কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ছাড়াই ষাঁড়টিকে লালন পালন করে আসছেন।
এখন পর্যন্ত ওই ফার্মে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা ও পরামর্শ তারা পাননি বলে জানান তিনি। কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য একমাত্র ওই বড় কালো মানিককে তারা প্রস্তুত করেছেন। যা ষাঁড়টিকে এক নজর দেখলে সবার নজর কাঁড়ে। এ ব্যাপারে আলাপ কালে ফার্মের মালিকের ভাতিজা শামীম মিয়া জানান, ওই ষাঁড়টি তাদের পরিবারের সকলের অত্যন্ত প্রিয় ও সৌন্দর্যের প্রতীক। তাই তারা আদর করে সবাই তার নাম দিয়েছেন কালো মানিক।
গত বছর ওই ষাঁড়টির মূল্য সাড়ে ১০ লাখ টাকা দাম হলেও তারা এতে সাড়া দেননি। ওই ষাঁড়টি লালন পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত কোন পশু চিকিৎসকেরও প্রয়োজন পড়েনি বলে জানান তিনি। তবে ফার্মের পাশেই রয়েছে নুরপুর ডেইরি পিজি, লাইফ স্টক ফার্মারস ফিল্ড স্কুল। যা বাস্তবায়নে, প্রাণি সম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে আলাপকালে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের (দায়িত্বরত) কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজিম উদ্দিন দৈনিক শায়েস্তাগঞ্জকে বলেন, ওই ফার্মে এত বড় ষাঁড় রয়েছে তার সন্ধান পূর্বে আমরা পাইনি। এখন যেহেতু সন্ধান পেয়েছি তাদেরকে অবশ্যই প্রাণি সম্পদ অফিসে এসে ফার্মের রেজিস্ট্রেশন করার পরামর্শ দেব। রেজিস্ট্রেশন করলে আমরা অফিস থেকে তাদেরকে উন্নত সেবা ও পরামর্শ দেব।