সৈয়দ সালিক আহমেদ ॥
হবিগঞ্জে চলছে মাটির উপরিভাগ কাটার মহোৎসব। জেলার শত শত ইট ভাটার মালিকরা কেটে নিচ্ছেন মাটির উপরের উর্বর অংশটুকু, অন্যদিকে অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত পুকুর তৈরী কিংবা উচু জমি নীচু করার নামে ফ্রিতে তুলে নিচ্ছে মাটির উপরিভাগ।
এসবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হলেও কার্যকরী কোন সুফল দৃশমান হচ্ছেনা। মাঠির উপরিভাগের অংশ (টপ সয়েল) কেটে ফেলায় নষ্ট হচ্ছে চাষি জমির উর্বরতা। ফলন কমে আসতেছে প্রত্যাশিত ফসলের। কারণ মাটির উপরিভাগে থেকে চলে যাচ্ছে দোআশ মাটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার জমির মাটির উপরিভাগ তুলে ফেলা হলে সেই জমিতে উর্বরতা ফিরে আসতে ৫/৬বছর সময় লাগে। জমিতে ফসল উৎপাদন ৩০-৪০% কম হবে। এতে করে লক্ষমাত্র অনুযায়ী উৎপাদন হবেনা খাদ্য ঘাটতির সংকট হতে পারে। হবিগঞ্জ জেলায় আউশ আমন বুরো ধান উৎপাদন ছাড়াও বছরের লক্ষ লক্ষ টাকার মৌসুনী সবজি চাষ করা হয়।
ফসল উৎপাদনের জন্য শতকরা ৫ভাগ যে জৈব সার উপাদানের প্রয়োজন হয় তা প্রধানত মাটির উপর থেকে ৮ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে মাটির উপরিভাগের এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত তুলে ফেলা হচ্ছে। এতে করে মাটি থেকে জৈব সার এবং উপকারী যেসব পোকা মাকড় তৈরী হওয়ার কথা তা আর তৈরী হতে পারেনা।
কৃষির জন্য বেলে এবং এটেল মাটি তেমন উপযোগী না হওয়ার কারণে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার চিরায়িত সৌন্দয্য। সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ফুসলিয়ে শত শত কৃষি জমিকে নষ্ট করে সরষে ফুলের স্বপ্ন দেখাচ্ছে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যাক্তি। আর এই স্বপ্নে বিভোর হয়ে অনেকে ধবংস করছেন নিজের ফসলি জমি। সাময়িক কিছু টাকা রঙ্গিন স্বপ্নের মত হাতছানি দেয়।
হাওর বেষ্ঠিত হবিগঞ্জ জেলায় প্রতি মৌসুমে গড়ে বুরো ধান আবাদের লক্ষমাত্রা ১২২৩০০ মেট্রিকটন এবং ফসল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৫২২১০৯ মেট্রিকটন। কিন্তু যদি এভাবে মাটির উপরিভাগ তুলে নেওয়া হয় তাহলে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে যাবে, যা আমাদের খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই কৃষি জমিকে বাচাতে এখনি প্রয়োজন মাটির উপরিভাগ কাটা বন্ধে কঠোর প্রদক্ষেপ।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ তমিজ উদ্দিন খান বলেন, ফসলের জন্য রাসায়নিক সারের চাইতে জৈব সার বেশী কার্যকরী। আর এই জৈব সার তৈরী হয় মাটির উপরিভাগের অংশ থেকে, কিন্তু যদি মাঠির উপরিভাগ তুলে ফেলা হয় তাহলে মাটি থেকে যেমন জৈব সার উৎপাদন হবেনা তেমনি কাঙ্খিত ফসলও পাওয়া যাবেনা।