সৈয়দ আখলাক উদ্দিন মনুসর, শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ॥ হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান সৈয়দ আতাউর রহমান ওরফে ফরিদ মিয়া আর নেই। গতকাল শনিবার ভোর সকাল ৭ টায় ঢাকা গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি ১ ছেলে, ১ মেয়ে, স্ত্রী, ১ ভাই, ১ বোন সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন গুন গ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘ ৭/৮ মাস যাবত শারীরিক অসুস্থতায় ভূগছিরেন। তিনির মৃত্যুর খবর শুনে ঢাকার আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সচিব, যুগ্ন-সচিব, উপ-সচিব, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসেন ঢাকার ধানমন্ডির বাসায় এবং নিজ গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের রিচি সাহেব বাড়িতে অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, পারা-মহল্লার লোকজন, হবিগঞ্জের অনেক প্রশাসন, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিকরা দেখার জন্য ছুটে আসেন। এদিকে গতকাল শনিবার বাদ জোহর নামাজের পর ১ম জানাজার নামাজ ঢাকার ধানমন্ডি নিজ বাসার এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২য় জানাজার নামাজ রাত ৯ টায় রিচি সাহেব বাড়ী জামে মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরহুমকে তার পিতা মরহুম মৌলানা সৈয়দ আহম্মদ আলী ওরফে মধুমিয়া (রঃ) এর পাশের্^ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। উল্লেখ্য যে, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামের সাহেব বাড়ি মরহুম মৌলানা সৈয়দ আহম্মদ আলী ওরফে মধুমিয়া (রঃ) ও মরহুমা তাহিরুন্নেছা বেগমের ৩য় পুত্র সৈয়দ আতাউর রহমান ওরফে ফরিদ মিয়া।
জানা যায়, তিনি ১৯৫৩ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর রিচি সাহেব বাড়ীতে জম্ম গ্রহণ করেন এবং রিচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে পাঠশালা শেষ করে তিনি হবিগঞ্জ সরকারী হাই স্কুলে ভর্তি হন ও ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনে ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুল সহ মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেন।
কুমিল্লা বোর্ডোর অধিনে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে ১৯৭০ সালে সিলেট সরকারী কলেজ হতে সায়েন্সে ১ম বিভাগে পাশ করেন এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স এডমিশন নিয়ে অতঃপর ১৯৭৪ সালে কৃতিত্বের সাথে বি এ (অনার্স) এবং ১৯৭৫ সালে এম এ পাশ করেন। ১৯৭৬-৭৮ ইং সাল পর্যন্ত তিনি কর্মজীবনে প্রথমে অগ্রাণী ব্যাংক ও বিএডিসি-তে অফিসার ছিলেন। ১৯৭৯ সালে ঝঁঢ়বৎরড়ৎ চড়ংঃ ঊীধসরহধঃরড়হ পরীক্ষায় অংশ গ্রাহণ করেন। এবং প্রথম শ্রেনীর কর্মচারী হিসেবে সরকারি প্রশাসনিক চাকুরীতে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। অবশেষে তিনি উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য এবং বিভিন্ন সেমিনার-কনফারেন্সে যোগ দেন জাপান, ইংলেন্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, দুবাই সহ আরো অনেক দেশে সরকারী খরচে ভ্রমন করেন। ১৯৮০ সালে শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রি মরহুম সৈয়দ মহিবুল হাসান এর একান্ত সচিব ছিলেন। ১৯৯৪ সালে রেহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রী শতীশ চন্দ্রের একান্ত সচিব ছিলেন। ১৯৮৮ সালে ডেপুটি সেক্রেটারী পদে উন্নীত হয়ে আরব-আমিরাতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের খধনড়ঁৎ ঈড়হংঁষধৎ পদে সেখানে প্রায় ৪ বছর কর্মরত থেকে ২০০২ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং ২০০৩ সালে অতিরিক্ত যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এসময় অতিরিক্ত সচিব হিসেবে এগ্রিকালচার মিনিষ্ট্রিতি চাকুরিরত ছিরেন। অবশেষে তিনি শিক্ষা মন্ত্রনালয় এর সচিব হয়ে দীর্ঘ কয়েক বৎসর যাবত দায়িত্ব পালন করে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর শেষে তিনি ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। মরহুম সৈয়দ আতাউর রহমান ১৯৮৪ সালে বি-বাড়িয়া জেলার নাসির নগর উপজেলার গুনিয়অউক গ্রামে জমিদার সাহেব বাড়ি মরহুম এ আর মঞ্জুর আলীর কন্যা বেগম ফাতেমা আক্তার কে বিবাহ করেন এবং তিনি শায়েস্তাগঞ্জ প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক সাংবাদিক সৈয়দ আখলাক উদ্দিন মনসুর এর সম্পর্কে দাদা হন।