স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৈচিত্রময় আয়োজনে এমপি এডভোকেট আবু জাহিরের সমর্থনে হবিগঞ্জে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা হয়ে গেল গতকাল। দুপুরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ থেকে এমপি আবু জাহিরের ১০ বছরের সফলতা উদযাপনে বর্ণাঢ্য শোভযাত্রা বের হয়। সকাল থেকেই শহরে ছিল উৎসবের আমেজ। খন্ড খন্ড মিছিলের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে পয়েন্টে পয়েন্টে জমায়েত হতে থাকেন। পরে মিছিল নিয়ে একত্র হন কেন্দ্রীয় ঈদগাহে। হবিগঞ্জ সদর, লাখাই, এবং শায়েস্তাগঞ্জবাসী আয়োজিত শোভাযাত্রা দেখতে শহরের অলি গলি ও ভবনের ছাদে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন।

হবিগঞ্জবাসীর কাছে মিছিল-মিটিং দেখার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। তবে গতকালের শোভাযাত্রায় ছিল বৈচিত্র। আকাশে যখন বন বন করে উড়ে যায় ড্রোন, তখন নৌকা নৌকা বলে চিৎকার শুরু করেন উপস্থিত জনতা। এ ধরণের অনেক বৈচিত্রময় আয়োজন ছিল শোভযাত্রায়। হাজার হাজার জনতার গগনবিদারী আওয়াজ, উন্নয়ন সম্পর্কিত শিল্পীদের গান আর রঙ-বেরঙের ফেস্টুনে বৈচিত্র্যময় ছিল এই আয়োজন।

শোভাযাত্রায় অনেক আলেম-ওলামাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আব্দুল করিম নামে এক বয়োবৃদ্ধ আলেম বলেন, ভাল কাজের প্রতিদান না দিলে কেউ ভাল কাজ করতে উৎসাহ পায় না। এমপি আবু জাহির ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য যে পরিমাণ কাজ করেছেন; তার প্রতিদান দিতেই আমি এই বৃদ্ধ বয়সে মিছিলে ছুটে এসেছি।

বুকে নৌকা প্রতীক একে খালি গায়ে এবং বিভিন্ন সাজ ধারণ করে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় অনেক যুবক। রিচি থেকে আসা যুবকরা এক রঙের টি শার্ট পড়ে নৌকা বেয়ে মাত করে দেন পুরো শোভাযাত্রা। ট্রাকে থাকা সঙ্গীত দলের আশেপাশে ছিল তুমুল উন্মাদনা।
গত ১০ বছরে হবিগঞ্জে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়নসহ যুগান্তকারী উন্নয়ন করায় আয়োজন করা হয় এই মিছিলের।

অংশগ্রহণকারীরা রং বেরঙ্গের টি-শার্ট ও ক্যাপ পরিহিত অবস্থায় এই মিছিলে অংশ নেন। বিভিন্ন উন্নয়ন এর ছবি এবং বর্ণনা সম্বলিত ফেস্টুন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং এমপি আবু জাহিরের ছবিও ছিল অনেকের হাতে। রং বেরঙ্গের নৌকা এবং বৈঠা নিয়েও হাজির হন অনেকেই। হাজারো বাশির সুরের মুর্ছনায় ছিল উৎসবের পরিবেশ। ছিল শিল্পীদের গানের দলের একাধিক গাড়ী ও ব্যান্ড পার্টি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট, সকল সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনও মিছিলে যোগ দেয় আলাদা ব্যানারে।

শারীরিক অসুস্থতার জন্য শোভাযাত্রায় এসেও যোগদান করতে পারেননি হবিগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবী ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট মোঃ আবুল খায়ের। তিনি বলেন, আমার জীবনে এতবড় শোভাযাত্রা দেখিনি। এই শোভাযাত্রা প্রমাণ করেছে হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জের মানুষ এমপি আবু জাহিরকে কত ভালবাসে।

কেন্দ্রীয় ইদগাহের ফটকে শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার পূর্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি। অন্যান্যের মাঝে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল হক চৌধুরী, মোঃ আরব আলী, শেখ শামছুল হক, শরীফ উল্লাহ, এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, মুকুল আচার্য্য, বিশিষ্ট মুরুব্বী সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রইছ মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামীম, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এডভোকেট মনোয়ার আলী, মোঃ সজিব আলী, এডভোকেট আফিল উদ্দিন, এডভোকেট হুমায়ুন কবির সৈকত, মোঃ আকরাম আলী, এডভোকেট ক্ষিতিশ চন্দ্র গোপ, মো. আলমগীর খান, এডভোকেট আব্দুল মোছাব্বির বকুল, এডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান, সদস্য মোঃ আব্দুর রহিম, এডভোকেট সৈয়দ আফজল আলী দুদু, এডভোকেট সুলতান মাহমুদ, শঙ্খ শুভ্র রায়, এডভোকেট কনক জ্যোতি সেন রাজু, মোস্তফা কামাল আজাদ রাসেল, জেলা কৃষকলীগ সভাপতি হুমায়ুন কবির রেজা, হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটো, সাধারণ সম্পাদক মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল, লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ, শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ ছালেক মিয়া, চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক বোরহান চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সফর আলী, আব্দুল মোতালিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল তালুকদার, আব্দুর রহমান, হোসেইন মোঃ আদিল জজ মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ সরদার, আব্দুল মুকিত, শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান মাসুক, জেলা তাতীলীগের সভাপতি মুদ্দত আলী, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডাঃ ইসতিয়াক রাজ চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহী।

পরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুণরায় ঈদগাহে গিয়ে শেষ হয়।

সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- ফরহাদ আহমেদ আব্বাস, মোঃ আনু মিয়া, মোঃ আক্তার হোসেন, এনামুল হক শেখ কামাল, মোঃ মুখলিছ মিয়া, বুলবুল খান, মাহবুবুর রহমান হিরো, মোঃ তাজউদ্দিন, লাখাই উপজেলার বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানদের মাঝে- শেখ মুক্তার হোসেন বেনু, এনামুল হক মামুন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাই কামাল, রফিকুল ইসলাম মলাই, জেলা পরিষদ সদস্য মুর্শেদ কামাল।

লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নরুজ্জামান মোল্লা, শরীফ উদ্দিন তালুকদার, সিরাজুল ইসলাম, জ্যোতিষ পাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টার, শাহ রেজা উদ্দিন আহমেদ দুলদুল, ঢাকাস্থ লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহমেদ, সর্দার উমর ফারুক, আব্দুর রহমান সরদার, লাখাই উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল মজিদ চৌধুরী শাকিল, কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহেল লস্কর, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মোল্লা, মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি বীরেশ দাশ, সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দাশ।

সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ রফিক আলী, মহিউদ্দিন চৌধুরী পারভেজ, মীর হোসেন, সাহেব আলী, জালাল মিয়া, এমরান আহমেদ, ইসহাক আলী সেবন, আব্দুস সামাদ, জবেদ আলী মাস্টার, নুরুল হক, মাহবুব হোসেন চৌধুরী দিলু, সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ আলী, জাহির মিয়া, উত্তম রায়, শিবেন্দ্র চন্দ্র দেব শিবু, এডভোকেট আবুল কালাম, ফরিদ আহমেদ, আব্দুল লতিফ, বুলবুল খান, কুতুব উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান হিরো ও মাহবুবুর রহমান দীপন। এছাড়াও সদর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ফজল উদ্দিন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি শেখ সেবুল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন সুমন, উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক কবির মিয়াসহ সদর উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

লাখাই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিদের মাঝে আলমগীর আলম তালুকদার মাহফুজ, হাজী ইসহাক মিয়া, হাজী ফারুক মিয়া, আব্দুল মালেক লস্কর, আব্দুল কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন, আব্দুল মজিদ, ইকবাল তালুকদার, আব্দুর রহমানসহ ৫৪টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এডভোকেট মোঃ আবু জাহির বলেন, হবিগঞ্জবাসী বারবার আমাকে কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেছেন। আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ অনেক আশা নিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন। আমি দিনরাত পরিশ্রম করে এই আশার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করেছি। দলের নেতাকর্মী এবং এলাকার জনগণের পাশে থেকে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছি। আগামী নির্বাচনে সকল নেতাকর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনও ষড়যন্ত্র যাতে আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে। ড. কামাল হোসেনের সাথে যে ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে তাদেরকে রাজপথে মোকাবেলা করতে হবে।

এমপি আবু জাহির তার বক্তৃতায় হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি এবং বাংলাদেশের সফল অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ এএমএস কিবরিয়া ও মরহুম মোস্তফা আলীসহ যারা দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করেছেন, তাদেরকেও স্মরণ করেন। এ সময় তিনি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কিনা জানতে চাইলে সকলেই হাত তোলে তাকে সমর্থন জানান।
শায়েস্তানগর এলাকার আবুল কালাম নামে এক পথচারী বলেন, জাহির ভাই দেখাইয়া দিছে। নৌকারে কেউ আটকাতে পারবে না।

আয়োজকরা জানান, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সফল করতে এবং ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হয়েছে। কার এলাকা থেকে বেশী লোক আসে তার জন্য ছিল রীতিমত প্রতিযোগিতা। শোভাযাত্রাটি এয়ারলিংক ক্যাবলে সরাসরি সম্প্রচার হওয়া ছাড়াও অনেকেই ফেসবুকে লাইভ দেন। এ সময় বর্ণমালা খেলাঘরের কর্ণধার দীপুল কুমার রায়, নাট্যকার রুমা মোদক, শিশু সংগঠক সুধাংশু সুত্রধর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহ জয়নাল আবেদীন রাসেল সম্প্রচার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহায়তা করেন সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারি সুদীপ দাশ।