স্টাফ রিপোর্টার॥ হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য এবং হবিগঞ্জ পৌরসভার আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান সেলিম ২০০৬ সালের একটি রাজনৈতিক মামলায় সাজার আদেশ থাকায় মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। পরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের একটি রাজনৈতিক মামলায় নি¤œ আদালত থেকে আতাউর রহমান সেলিমকে ৩ বছরের শাস্তি প্রদান করে। পরে আতাউর রহমান সেলিম আপিল দায়েরের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে রাজনৈতিক মামলা হিসাবে সেটি প্রত্যাহারের আদেশ প্রদান করা হলেও সাবেক বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন আপিলকারী এবং প্রার্থী পক্ষের অনুপস্থিতিতে আপিল নিস্পত্তি করে নি¤œ আদালতের রায় বহাল রাখেন। ফলে আদালতের আদেশকে সম্মান জানিয়ে তিনি আত্মসমর্পন করার সিদ্ধান্ত নেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর হবিগঞ্জ শহরে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে হবিগঞ্জ শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত দৈনিক আজকের হবিগঞ্জ পত্রিকায় ভাংচুরের ঘটনায় আতাউর রহমান সেলিমসহ ৭জনকে আসামী করে একটি দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন ওই পত্রিকার মেশিনম্যান মিজানুর রহমান। ২০০৭ সালের ১৪ আগস্ট দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল ইসলাম আতাউর রহমান সেলিমসহ তিনজনকে তিন বছর মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করেন। পরে আতাউর রহমান সেলিম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন।

এরই মাঝে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে এই মামলাটিসহ বেশ কিছু মামলাকে রাজনৈতিক মামলা হিসাবে তালিকাভুক্ত করে এবং সেগুলো প্রত্যাহারের নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু হবিগঞ্জের অন্যান্য মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হলেও এই মামলাটি সকলের অগোচরে থেকে যায়। আপিলকারী ও প্রার্থী কোন পক্ষই মামলায় উপস্থিত না থাকলেও সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল এক আদেশে নি¤œ আদালতের শাস্তি বহাল রাখেন এবং ২৮ এপ্রিল এর মধে আসামীদেরক হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম বেশ কিছুদিন যাবৎ আদালতে হাজিরা প্রদানের জন্য প্রস্তুতি নিলেও রাজনৈতিক,পারিবারিক ও ব্যাক্তিগত ব্যস্থতার জন্য তিনি যথাসময়ে হাজিরা প্রদান না করে মঙ্গলবার হাজির হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার দুপুরে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে আদালতে উপস্থিত হন তিনি। তার পক্ষে অর্ধশতাধিক আইনজীবী উচ্চ আদালতে আপীলের শর্তে জামিন প্রার্থনা করেন। কিন্তু বিচারক জামিন মঞ্জুর না করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে আতাউর রহমান সেলিমের আইনজীবী ও সাবেক পিপি এডভোকেট এম আকবর হোসেন জিতু বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক ও মিথ্যা মামলা। ফখরুদ্দন-মঈন উদ্দিনের সরকারের আমলে আতাউর রহমান সেলিমকে হয়রানী করতে মামলাটি পরিচালনা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করা হবে। নি¤œ আদালতের এখতিয়ার না থাকায় জামিন না মঞ্জুর হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আতাউর রহমান সেলিমকে দ্রুত কারাগার থেকে বের করতে যাতে সহজেই নকল পাওয়া যায় বিষয়টি বিচারকের কাছে উত্তাপন করলে বিচারক বিষয়টি বিবেচনা করেন। ফলে দ্রুত আতাউর রহমান সেলিম আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।

আদালতে আতাউর রহমান সেলিমের পক্ষে এডভোকেট আকবর হোসেন জিতুসহ পিপি এডভোকেট সিরাজুল হক চৌধুরী, এডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন, এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, এডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদার, এডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটো, এডভোকেট দেবাংশু দাশগুপ্ত রাজু, এডভোকেট সুলতান মাহমুদ, এডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান, এডভোকেট আজিজুর রহমান খান সজল, এডভোকেট সামছুলহক, এডভোকেট মুর্শেদ আহমেদ লুকু এবং এডভোকেট তুহিন আহমেদসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী জামিনের প্রার্থনা করেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল থেকে রেডক্রিসেন্ট অফিসে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা-কর্মীরা এসে জড়ো হন। পরে দুপুরে মিছিলসহকারে আতাউর রহমান সেলিম আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন এবং নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেন। এ সময় তিনি সকল নেতা-কর্মীকে ধৈর্য্য ধরার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে রাজপথে থেকে দলকে সংগঠিত করতে কাজ করতে গিয়ে বারবার কারা বরণ করেছি। আমার বিরুদ্ধে বার বার ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই মামলায়ও আমি আইনগতভাবেই লড়াই করে কারাগার থেকে আপনাদের মাঝে ফিরে আসব। এই সময়ে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিকল্প নেই।

এ সময় জেলা যুবলীগ সাধারন সম্পাদক বোরহান চৌধুরীর সঞ্চালনায় বক্তৃতা করেন বিপ্লব রায় চৌধুরী, শফিকুজ্জামান হিরাজ, তাজ উদ্দিন আহমেদ তাজ, মো. ফারুক পাঠান, মোঃ রেখাছ মিয়া, মোঃ জাহির মিয়া, ডাঃ শেখ ইশতিয়াক রাজ চৌধুরী, মোঃ জাকির হোসেন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন শাহ মোঃ আরজু, শওকত আকবর সোহেল, মোঃ সামছু, আব্দুর রউফ মাসুক, ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহেদুজ্জামান বাবুল, মিজানুর রহমান শামীম, মোতাহের হোসেন রিজু, শেখ উম্মেদ আলী শামীম, জাকারিয়া চৌধুরী, মোঃ ফেরদৌস আহমেদ, এডভোকেট শেখ আনিসসহ নেতৃবৃন্দ।

এদিকে আতাউর রহমান সেলিমের মামলা থাকায় আদালতে শুরুতেই মামলাটি শুনানী করা হয়। শুনানী শেষে সরাসরি প্রিজন ভ্যানে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে। এসময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ান আতাউর রহমান সেলিম। নেতা-কর্মীরা তখন শ্লোগান দেন‘ সেলিম ভাইয়ের ভয় নাই-রাজপথ ছাড়ি নাই। পরে এই ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা সেখানে পোস্ট করেন আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আতাউর রহমান সেলিম আদালতে হাজির হয়ে স্বেছায় আত্মসমর্পণ করেছেন। বার বার কেন নিয়াতিত হচ্ছেন আতাউর রহমান সেলিম। এ ধরনের মন্তব্যসহ তার ছবিগুলো ভাইরাল হয়ে যায়।