মোঃ আব্দুল হক রেনু, শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি ॥ শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ সংলগ্ন গঙ্গানগর গ্রামে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক সঞ্জিত চক্রবর্তীর বাড়ি। বাঁশের ও টিন দিয়ে তৈরী ছোট্ট একটি ঘর। এ ঘরে একমাত্র জীবন সঙ্গী স্ত্রী শুক্লা চক্রবর্তীকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী থাকার পরও তিনি জীবনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজারেরও অধিক শিশু ও শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন।
বেশকিছু দিন হলো তিনি আর শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে পারছেন না। কারণ, তিনি হার্টের রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী। বর্তমানে তার প্রতিদিন ১শ ৪০ থেকে ১শ ৫০ টাকার ঔষধ খেতে হচ্ছে। নিজের ভিটে বাড়ি ছাড়া আর কোন জমিজমা নেই। দুই মেয়ে তাদের বিয়ে দিয়ে স্বামীর পরিবারে পাঠিয়েছেন। ঘরে একমাত্র স্ত্রী শুক্লা চক্রবর্তীকে নিয়ে অনেক কষ্টে অনাহারে অর্ধাহারে প্রায় সময়ই কাটাতে হচ্ছে তাকে।
যে মানুষটি দীর্ঘদিন ধরে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন, আজ ওই মানুষটি হার্টের রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন বিছানায় শয্যাশায়ী। এ বিষয়টি জানতে পেরে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা শাখার নের্তৃবৃন্দরা। সম্প্রতি মানবাধিকার কমিশন নের্তৃবৃন্দরা তাদের মাসিক সভায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক সঞ্জিত চক্রবর্তীকে সম্মাননা ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন। সভায় সংগঠনের কার্যকরি সভাপতি নূরুল ইসলাম সরদার তার নিজস্ব আয় থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই অর্থ নিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক সঞ্জিত চক্রবর্তীর বাড়িতে যান বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা শাখার নের্তৃবৃন্দরা। এ সময় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায়সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ আব্দুর রকিব। সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আল রিয়াদের সঞ্চালনায় উক্ত সভায় মনের অনুভুতি প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সহ-সভাপতি পৌর কাউন্সিলর আব্দুল জলিল, সমীরণ চক্রবর্তী শংকু, তাজুল ইসলাম লাল, গোলাম মুক্তাদির চৌধুরী মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মামুন চৌধুরী ও আব্দুল হক রেনু, সমাজসেবক বিজয় ভট্টাচার্য্য স্বপন, মিলন বসাক প্রমূখ।
শেষে শিক্ষক সঞ্জিত চক্রবর্তীর হাতে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা ও কমিশনের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সম্মাননা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শিক্ষক সঞ্জিত চক্রবর্তী। ধরে রাখতে পারেননি তখন দু চোখের জল। সাথে সাথে তিনি কমিশন নের্তৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মনের সংক্ষিপ্ত অনুভুতি প্রকাশ করেন। এসময় নের্তৃবৃন্দের প্রতি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক সঞ্জিত চক্রবর্তী ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক সহযোগিতার দাবি জানান সঞ্জিত চক্রবর্তীর স্ত্রী শুক্লা চক্রবর্তী। মানুষ মানুষের জন্য তাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক সঞ্জিত চক্রবর্তীর পরিবারের পাশে শায়েস্তাগঞ্জসহ দেশের সকল হৃদয়বান ও বৃত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে পরিবারটি বেঁচে থাকার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।