এম এ আই সজিব, হবিগঞ্জ থেকে : বাহুবলে যুবসংহতি নেতা রফিকুল ইসলাম হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া দুই সহোদরকে রিমান্ডে চেয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। গত রবিবার সকালে পশ্চিম জয়পুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র রফিকুল ইসলাম (৩৫) এর কয়েক টুকরো লাশ উপজেলার দক্ষিণ সীমান্তে দত্তপাড়া ও গোবিন্দপুর গ্রামের মধ্যবর্তী রেললাইন থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ জাহির ও কালাম নামের দুই সহোদরকে গ্রেফতার করে।
রবিবার রাতেই বাহুবল মডেল থানায় নিহতের ভাই গ্রেফতারকৃতরাসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার দুপুরে দুই সহোদরকে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কাওছার আলম-এর আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা বাহুবল মডেল থানার এসআই জিয়া উদ্দিন।
কিন্তু আদালতে মামলার সিডি দাখিল না হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত আগামীকাল মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য্য করেন। সূত্র জানায়, বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জয়পুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। তিন সন্তানের পিতা রফিকুল ইসলাম বাড়িতে থেকেই বিভিন্ন স্থানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতেন। তার বড় ভাই শফিকুল ইসলাম কাতার প্রবাসি এবং ছোট ভাই হাফেজ ছাদিকুর রহমান স্থানীয় বাজারে ব্যবসা করেন।
দুই ভাইয়ের কেউ প্রবাসে এবং ব্যবসার কাজে বাহিরে থাকায় শফিকুল ইসলামই বাড়িঘর ও সহায়-সম্পত্তি দেখভাল করতেন।
বাড়ির একটি রাস্তা নিয়ে এ কারণেই পাশের ঘরের বাসিন্দা মৃত আব্দুল জব্বারের পুত্র আব্দুল জাহির (৫২), আবুল কালাম (৬৩) ও আবুল হাসিম (৫৬) এর সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। মামলার এজাহার মতে, গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাতের খাবার শেষে শফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়েন।
এমন সময় তাদের দক্ষিণপার্শ্বের বাড়ির জাহির, কালাম ও হাসিম ডেকে ঘর থেকে বের করেন শফিকুল ইসলামকে। তিনি দরজা খোলা রেখেই বের হয়ে যান। এ সময় তার রুমেই ঘুমুচ্ছিল শ্যালক শাহ আলম। অন্য ঘরে সন্তানদের নিয়ে ঘুমুচ্ছিলেন স্ত্রী তাছলিমা ও অন্যান্যরা। রাত সোয়া ২টার দিকে স্ত্রী তাছলিমা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘুম থেকে উঠে দেখেন স্বামী রফিকুল ইসলামের ঘরের দরজা খোলা। এ সময় তিনি ওই ঘরে গিয়ে ভাই শাহ আলমকে ঘুম থেকে তোলে স্বামীর সন্ধান জানতে চান।
সে জানায়, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম কোথায় গেছেন জানি না। এ অবস্থায় তাছলিমা চিৎকার দিয়ে ঘরের লোকজনকে ডাকাডাকি শুরু করলে অপর ঘরে থাকা তার দেবর হাফেজ ছাদিকুর রহমান জেগে উঠেন।
এ সময় ছাদিকুর রহমান জানান, ‘রাতে জাহির, কালাম ও হাসিম-এর ডাকে শফিকুল ইসলাম ঘর থেকে বের হয়েছিলেন।’ এ অবস্থায়, বাড়ির লোকজন ও পাড়াপড়শিরা আশপাশে খোজাখুজি শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা বাড়ির পশ্চিম-উত্তর দিকে আব্দুল জাহিরদের ডোবার পাশে সাকু মিয়ার জমিতে জমাট বাঁধা রক্ত, শফিকুল ইসলামের পড়নের রক্তমাখা সাদা গেঞ্জি, লুঙ্গি এবং গ্রামের মধ্যপাড়া জামে মসজিদের ডোবার পূর্ব পাশে সেওড়া গাছের নিচে মাটিতে কুড়ালের আচড় সহ রক্তমাখা কোড়াল পাওয়া যায়।
আলামতগুলো দেখে রাতেই বাহুবল মডেল থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। পাশাপাশি পরিবার গ্রামের লোকজন আশপাশের ডোবা, পুকুর, ঝুপ-ঝাড়সহ সর্বত্র শফিকুল ইসলামের সন্ধান করতে থাকেন।
খোজাখুজি চলতে থাকাবস্থায় সকাল ১১টায় খবর আসে, শফিকুল ইসলামদের বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দক্ষিণে দত্তপাড়া-গোবিন্দপুর গ্রামের মাঝখানে রেললাইনের উপরে এক ব্যক্তির টুকরো টুকরো মৃত দেহ পড়ে আছে। সাথে সাথে শফিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্য, গ্রামবাসী ও পুলিশ রেললাইনে গিয়ে লাশ সনাক্ত করে। এ সময় শফিকুল ইসলামের বডি রেললাইনের দুই শিখের মাঝখানে, পার্শ্ববর্তী পৃথক স্থানে একটি হাত ও একটি পা এবং মস্তক পাওয়া যায়। মস্তকের খুলি ভাঙা ছাড়াও আরো অন্ততঃ ৬টি কাটা জখমসহ ১৭টি মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।