এস এইচ টিটু,সৌদিআরব থেকে : শিশু রাজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম সৌদি আরবের জেদ্দায় আটকের পর দোষ স্বীকার করে কামরুল বলেন, “আমারে শয়তানে পায় গেছে রে ভাই। মনে আছিল না। আমার ভাই আর মা কই, আমি জানি না। সকাল পর্যন্ত আমি একটা কলও দিতাম পারছি না।”

কামরুলকে শিশু রাজন হত্যা মামলায় তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে—সাংবাদিকদের এমন কথার জবাবে কামরুল কেঁদে উঠে সবার কাছে মাফ চান। তিনি বলেন, “আমারে মাফ করি দাও ভা। সকলে মিলে ওর মা-বাবার কাছে মাফ চাইরে ভা। তোমরা মাফ করিয়া দাও। আমি তারে জিন্দা থুইয়া আইছি। আমি কুনো মারছি-ধুরছি না।”

শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামী কামরুল ইসলাম সৌদি আরবের জেদ্দায় আটক হয়েছেন। সোমবার আটকের পরই স্থানীয় বাংলাদেশিদের রোষের শিকার হন তিনি। কয়েকজন কামরুলকে মারধরও করেন। এরপর থেকেই ক্রমাগত কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাচ্ছেন কামরুল।

সামিউলকে হত্যার দায় স্বীকার করে কামরুলের দেওয়া বক্তব্য পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

কেনো শিশুটিকে মারছে এমন প্রশ্ন করা হলে কামরুল বলতে থাকে, ভাই, আমিতো ধরছি না, ধরছে ছকিদারে (ময়না)। পরে আমরার বাড়িত হে ফোন দিছে। ভাইয়ানতে কইছইন ছাড়ি দিলা। হে ছাড়ছে না। বাদে আমি আইছি, আইয়া আমিও মারছি। হেও মারছে। ভাইয়ানতে বার বার ফোন দিয়া কইছইন এরে ছাড়ি দিলা। হে (ময়না) ছাড়িয়া দিছে না। বাদে আরো কতোটা মারিয়া-উরিয়া আমি আমার বাসাত আই”ছি।

কারা কারা ছিলো জানতে চাইলে বলে, বউত আসলা। আমি হকলর নামও জানি না।

পানি চাইলে কেনো পানি দেওয়া হলো না জানতে চাইলে কামরুল বলে, ছকিদার (ময়না) না করছে পানি দিতাম না।

উল্লেখ্য, ধারণকৃত ভিডিওতে শুনা যায়, নিহত রাজন বলছে, আমারে একটু পানি দেওরেবা, তখন একজন বলছে, পানি দিলে মরি যাইবে। তখন রাজন বলেছিলো, “আমি মরতাম নায়রে বা”। এসময় তাকে পানির বদলে ঘাম খেতেও বলা হয়।

কামরুল রাজনকে রড দিয়ে মারা হয়নি জানিয়ে বলে, বেইমানী মাততাম নায়, প্লাস্টিক দিয়ে মারছি।

সে আরো বলে, বাদ বাকি কিতা ওইছে জানিনা। তইয়া আইছি জিন্দা অবস্থায়।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সিলেট নগরীর কুমারগাঁওয়ে সামিউলকে চুরির মিথ্যা অপবাদে খুঁটির সাথে বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে সামিউল মারা গেলে তার লাশ গুম করার চেষ্টাকালে পুলিশের হাতে আটক হয় মুহিত আলম।

নির্যাতনকারীরা শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্যাতনের সময় মোবাইল ফোনে নির্যাতনের চিত্র ধারণ করে। ২৮ মিনিটের সে ভিডিওচিত্র অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়।

নিহত সামিউল আলম রাজনের বাড়ি সিলেট নগরীর কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের পাশে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদে আলী গ্রামে। সামিউলের বাবা শেখ আজিজুর রহমান পেশায় একজন প্রাইভেটকারচালক। তার দুই ছেলের মধ্যে সামিউল বড়। অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা সামিউল সবজি বিক্রি করত।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে নগরীর জালালাবাদ থানায় আটক মুহিদ আলম (২২) ও তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে (৪৫) আসামি করে মমলা দায়ের করেন।